মাম্পস এর ঘরোয়া চিকিৎসা- মাম্পস (Mumps) বা গালগণ্ড হল ভাইরাসজনিত একটি সংক্রমণ, যা গাল ও গলায় ফোলা ও ব্যথা সৃষ্টি করে। জানুন মাম্পসের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং ২৫টি কার্যকরী ঘরোয়া প্রতিকার।
মাম্পস এর ঘরোয়া চিকিৎসা শীর্ষক
লেখাটিতে যা যা থাকছে-
মাম্পস (Mumps) বা গালগণ্ড কি?
মাম্পস (Mumps) বা গালগণ্ড হলো ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, যা সাধারণত কণ্ঠ ও লালাগ্রন্থিকে প্রভাবিত করে। এতে গাল ও গলায় ফোলা ও ব্যথা হতে পারে। মাম্পস হলো ভাইরাসজনিত একটি সংক্রামক রোগ যা মূলত পারোটিড গ্রন্থি (থুতুর গ্রন্থি) ফুলে যাওয়ার মাধ্যমে চিহ্নিত হয়। এটি প্যারামাইক্সোভিরিডি পরিবারভুক্ত মাম্পস ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয় এবং সাধারণত এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়ায়।
মাম্পস এর প্রধান কারণসমূহ : –
মাম্পস, বা গালগণ্ড, মূলত মাম্পস ভাইরাস (Mumps virus) দ্বারা সৃষ্ট একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। এই রোগটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের মধ্যে দেখা যায়, তবে প্রাপ্তবয়স্করাও আক্রান্ত হতে পারে।
মাম্পসের প্রধান কারণসমূহ : –
মাম্পস ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণ: এটি একটি রুবুলাভাইরাস (Rubulavirus) পরিবারের ভাইরাস, যা শ্বাসনালীর মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে এবং সংক্রমণ ঘটায়।
ছোঁয়াচে সংক্রমণ: এই রোগটি অত্যন্ত সংক্রামক এবং হাঁচি-কাশি বা কথা বলার সময় আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ থেকে বের হওয়া ছোট ছোট লালা বা ফোঁটাগুলোর মাধ্যমে ছড়ায়।
সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহার করা সামগ্রী, যেমন খাবারের প্লেট, পানির গ্লাস, টয়লেট বা তোয়ালে স্পর্শ করলেও সংক্রমণ হতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব : যাদের শরীরে মাম্পসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি নেই বা যাঁরা মাম্পসের টিকা নেননি, তারা এই ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকেন।
টিকা না নেওয়া : যেসব শিশু বা প্রাপ্তবয়স্করা MMR (Measles, Mumps, and Rubella) টিকা নেননি, তারা মাম্পসের সংক্রমণের প্রতি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। MMR টিকা মাম্পসের বিরুদ্ধে কার্যকর সুরক্ষা দেয়।
জন্মগত প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকা : কিছু মানুষের জন্মগতভাবে ভাইরাসের প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, যা তাদের মাম্পসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
মাম্পসের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে গাল ও গলার ফোলা, কণ্ঠ ও চোয়ালে ব্যথা, জ্বর, মাথা ব্যথা, ও খাবার গিলে ব্যথা। সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং সংক্রামক সময়কালে (প্রায় ৭ দিন) জনসমাগম এড়ানো জরুরি।
🌐 পড়ুনঃ- পাইলস- কারন ও ঘরোয়া চিকিৎসা
মাম্পস এর লক্ষণঃ-
⪼ গলার দুই পাশে থুতুর গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, যা ব্যথা অনুভূতির সৃষ্টি করে।
⪼ জ্বর
⪼ মাথাব্যথা।
⪼ ক্লান্তি এবং খাবারের প্রতি অনীহা।
⪼ মাংসপেশিতে ব্যথা।
🌐 পড়ুনঃ- নার্ভের রোগের লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা
মাম্পস এর ঘরোয়া চিকিৎসাঃ-
প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরোয়া কিছু চিকিৎসা উপায় মেনে চললে আরাম পাওয়া যায়, তবে মারাত্মক সংক্রমণের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিচে মাম্পসের জন্য ২৫টি ঘরোয়া প্রতিকার দেওয়া হলো:
১. গরম ও ঠান্ডা সেঁক – ফোলা অংশে গরম এবং ঠান্ডা সেঁক দিতে পারেন। এটি ব্যথা এবং ফোলাভাব কমাতে সহায়তা করে। দিনে কয়েকবার সেঁক দেওয়া যেতে পারে।
২. অ্যালোভেরা জেল – অ্যালোভেরা জেল আক্রান্ত স্থানে লাগালে শীতল প্রভাব ফেলে, যা ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।
৩. হলুদ পেস্ট – হলুদে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য মাম্পসের ফোলাভাব কমাতে সহায়ক। সামান্য হলুদ গুঁড়া জল বা দুধের সাথে মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগান।
৪. আদা পেস্ট – আদা পেস্ট আক্রান্ত স্থানে লাগালে প্রদাহ এবং ব্যথা কমে। আদাতে অ্যান্টিসেপটিক উপাদান আছে যা সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
৫. লেবুর রস ও মধু – লেবুর রস এবং মধুর মিশ্রণ পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং ভাইরাস সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
৬. রসুন পেস্ট – রসুন পেস্ট ফোলা স্থানে লাগাতে পারেন। এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ আছে, যা সংক্রমণ কমায়।
৭. পুদিনা পাতা ও তুলসী পাতা – পুদিনা ও তুলসীর পাতা বেটে পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে লাগালে আরাম পাওয়া যায় এবং সংক্রমণও কমে।
৮. লেবুর রস ও জল গার্গল – হালকা গরম জলে লেবুর রস মিশিয়ে গার্গল করলে গলার ব্যথা কমে এবং সংক্রমণও হ্রাস পায়।
৯. তুলসী পাতার রস পান – তুলসী পাতার রস অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে এবং মাম্পসের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।
১০. কাঁচা হলুদ এবং দুধ মিশ্রণ – কাঁচা হলুদের রস দুধের সাথে মিশিয়ে পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
১১. নারকেল তেল ব্যবহার – নারকেল তেল গলায় ও ফোলা স্থানে মালিশ করলে ব্যথা কমে এবং সংক্রমণও কিছুটা হ্রাস পায়।
১২. অলিভ অয়েল এবং রসুন মিশ্রণ – অলিভ অয়েল গরম করে তাতে কয়েকটি রসুন দিয়ে পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে লাগান। এটি ফোলাভাব কমাতে সহায়ক।
১৩. লবঙ্গ এবং মধু মিশ্রণ – লবঙ্গের গুঁড়া ও মধুর মিশ্রণ খেলে গলা এবং ফোলা স্থানে আরাম পাওয়া যায়।
১৪. মেথি বীজের পেস্ট – মেথি বীজ বেটে পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে লাগালে ফোলাভাব ও ব্যথা কমে।
১৫. শসার রস ও মধু – শসার রসের সাথে মধু মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগালে শীতলতা আসে এবং ফোলাভাব কমে।
১৬. পেঁয়াজ পেস্ট – পেঁয়াজে অ্যান্টিসেপটিক উপাদান আছে, যা সংক্রমণ কমাতে সহায়ক। পেঁয়াজ পেস্ট আক্রান্ত স্থানে লাগালে ব্যথা কমে।
১৭. আমলকির রস – আমলকির রস পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
১৮. লেবুর রস ও কুসুম গরম জলে গার্গল – লেবুর রস কুসুম গরম জলের সাথে মিশিয়ে গার্গল করলে গলার ব্যথা কমে এবং ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।
১৯. তুলসী পাতা এবং মধু – তুলসী পাতা বেটে মধু মিশিয়ে খেলে সংক্রমণ হ্রাস পায়।
২০. কাঁচা হলুদের পেস্ট আক্রান্ত স্থানে লাগানো – কাঁচা হলুদ বেটে পেস্ট তৈরি করে গাল ও গলায় লাগালে আরাম পাওয়া যায়।
২১. মধু ও আদার রস পান করা – আদার রস এবং মধু মিশিয়ে পান করলে প্রদাহ কমে।
২২. গরম জলে লবণ মিশিয়ে গার্গল – গরম জলে লবণ মিশিয়ে গার্গল করলে গলার ব্যথা কমে এবং সংক্রমণও হ্রাস পায়।
২৩. দারুচিনি চা পান করা – দারুচিনি চায়ের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক। এটি প্রতিদিন পান করা যেতে পারে।
২৪. বাঁধাকপির পাতা গরম করে লাগানো – বাঁধাকপির পাতা গরম করে আক্রান্ত স্থানে লাগালে ফোলাভাব কমে।
২৫. গাজরের রস ও কমলার রস পান – গাজর ও কমলার রসে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
এই ঘরোয়া চিকিৎসাগুলি প্রাথমিক অবস্থায় আরাম দিতে পারে, তবে মাম্পস বা অন্য ভাইরাসজনিত সংক্রমণ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
⨮ লেখাটিতে শুধুমাত্র একটি সামগ্রিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বিস্তারিত পরামর্শ এর জন্য চিকিৎসকের কাছে যোগাযোগ করুন।
🌐 পড়ুনঃ- জীবন বদলানো দুটি সেরা শিক্ষণীয় গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক- মুক্তাক্ষর
টেলিগ্রাম- মুক্তাক্ষর
WhatsApp Group- মুক্তাক্ষর