অতৃপ্ত প্রেমের করুণ পরিণতি আছে এই গল্পে। সোহান ও মিতার বন্ধুত্বে লুকানো ভালোবাসা ও রহস্যের কাহিনী, যেখানে বাস্তবতা ও হ্যালুসিনেশনের মাঝের সীমা মুছে যায়। এই গল্পে আবেগ, শোক, ও আত্মদর্শনের মিশ্রণ।
অতৃপ্ত প্রেমের করুণ পরিণতিঃ- “শেষ দেখা”
বিশ্বাস কর মিতা , এবার তুই বাড়ি গেলে , আমি পুরো স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করবো। লেট নাইট পার্টি , বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া কোনো কিছু কিন্তু বাদ দেবো না।
মিতা সোহান এর কথা গুলো শুনে হাসতে হাসতে বললো, বাব্বা আমি যাওয়ার আগেই আমার সামনে এসব বলছিস , এতটা সাহস বেড়েছে তোর?
সোহান কিছুটা চুপ করে গেলো , মিতার ব্যবহারে , যে মেয়েটা সামান্য ব্যাপারে এতটা ক্ষেপে উঠে তাকে সামলানো মুস্কিল হয়ে উঠে সেই কিনা আজ সোহানের এত অবাধ্য স্বাধীনতার কথা শুনেও নিশ্চুপ আর হাসছে।
সোহান বলে বসলো , এবার যাচ্ছিস যা তবে কিছু দিয়ে যা , যদি আর কোনোদিনও ফিরতে না পারিস তখন কি হবে !
মিতা ম্লান নয়নে বললো , তুই কি সেটাই চাস? আমি আর না ফিরি…..
ধুর পাগলি আমি তো এমনি এমনি বললাম , তুই না সব ব্যাপারেই বড্ড সিরিয়াস হয়ে যাস , কেন যে এত শত ভাবিস , বুঝি না !
এই নে সোহান আমার ব্রেসলেট টা।
সোহান মুখ বিচকে বললো , সামান্য ব্রেসলেট দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছিস তাই না ।
মিতা হেসে বললো, কে এসেছে রে বীর পুরুষ আমার যার জন্য বিশেষ কিছু আনতে হবে আবার। দে দে এবার আমার ফেয়ার ওয়েল গিফট টা দে তো।
সোহান অবুঝ দৃষ্টিতে বললো এবার দেবো না, পরের বার দেবো , পরের বার দিলে , সেই টানে তোকে ফিরতেই হবে বুঝলি তো , তাই অপেক্ষা করো বালিকে …..
এই বলে যে যার রাস্তায় আগুয়ান হলো ।
মিতার সাথে সোহানের বন্ধুত্ব টা , বন্ধুত্ব কম সংসার সমতুল্য। ওরা একে অপরকে ছেড়ে একটুও থাকতে পারে না। আর শাসন সে তো তাদের মা বাবারাও এতটা কোনোদিনও তাদের ওপর করেনি যেটা তারা একে অপরের ওপর ফলায়।
কর্মসূত্রে ওদের ছোটবেলার বন্ধুত্বটা আবার নতুন মোড় নিয়েছিল। তাই একসাথেই থাকা শুরু করে তারা অর্ধেক সংসার পেতে বসেছিল। বাকিটা একে অপরকে কোনোদিনও না বলতে পারা কিছু কথার জন্য আটকে ছিল।
🌐 পড়ুনঃ- রহস্যময় গল্প
এবার হঠাৎ মিতার এইভাবে বাড়ি চলে যাওয়ার ব্যাপার টা তে সোহান খুশি না হলেও , পরিবারের আর মিতার কথা ভেবে যেতে দিতে রাজি হয়েছে।
অপেক্ষার প্রহর যেন আর শেষ এই হচ্ছে না , এক ঘণ্টা দুই ঘণ্টা করতে করতে সোহান ফোনের সামনে ৪৮ ঘণ্টা পার করে ফেলেছে কিন্তু এখনো অবধি মিতার কোনো খবর সে পায়নি। তাই শেষমেশ সে যখন কোনো খবর পাওয়ার আসা দেখলো না , নিজেই বেরিয়ে পড়ল মিতার গ্রামের উদ্দেশ্যে।
অনেক দূরের রাস্তা , একেবারে রাজ্যের শেষ কোণায় মিতার বাড়ি , এক দিনের জার্নি শেষ করে অনেক খোঁজ করে শেষমেশ সোহান মিতার বাড়িতে পৌঁছাতে পারল।
আর পৌঁছেই সে যেটা দেখলো , সেটা সে স্বপ্ন তেও কল্পনা করতে পারেনি। দরজার মুখোমুখি বারান্দায় একটা ছোট বাচ্চার ছবি আর সেটা তে রজনীগন্ধার মালা পরানো , সেই ছবি আর কারো না , তার কাছের মানুষ মিতার।
সে দৌড়ে গিয়ে ছবি থেকে মাথা টা তুলে ছুঁড়ে ফেলে দিল , এর মাঝে সে লক্ষ্যই করেনি বাড়িতে অনেক জন বসে আছেন। আর তাদের মধ্যে থেকে এক বৃদ্ধা উঠে এসে বললেন , বাবা সোহান , তোমার আজকে আসার সময় হলো ?
সোহান অবাক হয়ে বলল , আপনি আমাকে চেনেন? আর এসব কি মিতার ছবি তে মালা কেন দিয়েছেন?
বৃদ্ধা অশ্রু ভরা দৃষ্টিতে বললেন , আমি তোমাকে তো খুব ভালো করে চিনি বাবা, তোমার জন্যই তো আমার মিতা……..।।
কি হয়েছে , বলুন ? আমার জন্য আপনার মিতা কি?
🌐 পড়ুনঃ- ভুল বঝাবুঝি ও হারানো ভালোবাসার গল্প
তোমার জন্যই আমার মিতা আত্মহত্যা করে প্রাণ দিয়েছিল। স্কুল শেষে যখন তুমি ভালো কলেজে পড়াশোনার জন্য মিতাকে কিছু না জানিয়েই রওনা দিলে , তখন মিতাও তোমার খোঁজ করতে করতে সেই কলেজেই ভর্তি হয়। আর সেই কলেজের হোস্টেলে সে আত্মহত্যা করে , আর চিঠি তে তোমার নাম লিখে যায়। কিন্তু তোমার নাম যেন কোনোদিনও প্রকাশ্যে না আসে, সেই দায়িত্ব আমাকে দিয়ে যায় চিঠির শেষে অনুরোধ চেয়ে।
তাই আমি আজ অবধি তোমার নাম কারোর সামনে করিনি। আর করতেও চাইনা। তাই তুমি চলে যাও।
মিতার ইচ্ছে ছিল ওর অস্থি যেন আমি কোনোদিনও বিসর্জন না করি। কিন্তু পরশু আমি সেটা গয়া তে দিয়ে ওকে চির মুক্তি দিয়েছি। ওকে এই ভব যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়েছি মুক্তি।
সোহানের সামনে সবকিছু যেন ঝাপসা হয়ে উঠে , ওর মনে পড়ে কলেজের দিন গুলির কথা যখন সে একটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিল। তবে সেই মেয়ে কয়েক মাসের মধ্যেই তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু মিতা? সে কি তাকে স্কুল জীবন থেকেই ভালোবাসতো , আর যদি বাসতো এই তাহলে কেন কোনোদিনও বলেনি ? তার মানে ওর মৃত্যুর জন্য কি সোহান নিজেই দায়ী ?
সোহান উৎকণ্ঠা মিশ্রিত গলায় কাঁপতে কাঁপতে বলে , তা হ লে….. তা হলে যার সাথে আমি এতদিন একসাথে কাটালাম সেটা কে ? সশরী মিতা নাকি তার আত্মা?
কোনটা ঠিক কোনটা ভুল , কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা ,সব কিছু যেন গুলিয়ে যায় সোহানের । তার মনে পড়ে সেই ব্রেসলেটের কথা যেটা মিতা স্কুলের ফেয়ার ওয়েল এর দিন যত্ন করে তাকে পরিয়ে দিয়েছিল।
তবে কি সেদিন এই মিতার সাথে তার শেষ দেখা হয়েছিল ?
পুরোটাই কি তাহলে ছিল সোহানের হ্যালোসিনেশন ? নাকি বাস্তব!
🌐 পড়ুনঃ- বাস্তব জীবনের একটি শিক্ষণীয় গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক- মুক্তাক্ষর
টেলিগ্রাম- মুক্তাক্ষর
WhatsApp Group- মুক্তাক্ষর