আজকের গল্পের প্রধান চরিত্র মালতি। গল্পে পাঠক খুঁজে পাবেন কীভাবে ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের পাশাপাশি, সমাজের অমানবিক আচরণ তাকে বারবার আঘাত করেছে। পড়ুন ভুবন কাকার দরিদ্র পরিবার ও মালতির জীবনসংগ্রামের এই হৃদয়বিদারক গল্প।
“মুখপুড়ি”- দারিদ্র্য ও প্রেমের এক করুণ ভালোবাসার গল্প
এতো বছর অপেক্ষার পর মালতী বুঝতে পারল , এখনো আমি তাঁকে ভালোবাসি। ওর মুখ পুড়ে গেছে বলেই ওর সৌন্দর্যটা আর নেই। কিন্তু এক কালে যার রূপের ছটা দেখতে স্নানের ঘাটে স্কুলের গেটে প্রেমিক ছোকরাদের ভিড় জমে থাকতো।
আজ তার দিকে তাকাতে ভয় লাগে। তাও আমি কিন্তু নাছোড়বান্দা। শেষ পর্যন্ত আর দুই দিন পর আমরা বিয়ে করে আমাদের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করবো বলে ঠিক করেছি। এমন পদ্মা মাসি হাউ মাউ করে কাঁদতে কাঁদতে এসে জানালো” মুখপুড়ির ভাগ্যটাই পোড়া , বিয়ে আয়োজন বন্ধ কর তোমরা”
কলকাতা শহরের কাছাকাছি এক প্রত্যন্ত গ্রামের শিবানী পুর। ভুবন কাকা ছিলেন এক প্রকার ঘর জামাই। এছাড়াও দরিদ্র কৃষক বলতে পারেন তাকে। ভাগ চাষ, জন খেটে, খেজুর গাছ কেটে তার রস সংগ্রহ করে তা থেকে গুড় তৈরি করে সংসার চালাতেন তিনি।
ছেলে সন্তানের লোভে পাঁচটা মেয়ে সন্তান জন্মের পর, একটি ছোট্ট পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার পর তিনি ক্ষান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু বিশাল পরিবার চালতে গিয়ে শত পরিশ্রম করেও তিনি গরীব এই রয়ে গেলেন।
স্বল্প আয়ের সংসারে আগে দুই কন্যার বিবাহ দিতে একপ্রকার সর্বস্বান্ত হয়ে বসেন ভুবন কাকা। যতটুকু জমি ছিল, সেটা বন্ধক দিয়ে, সুবীর মহাজনের কাছ টাকা ধার নিয়ে উমার বিয়ে দেন তিনি । বিয়ের কিছুদিন বাদেই উমার শ্বশুর বাড়ি থেকে বারবার পাওনা সামগ্রীর জন্য ভুবন বাবুকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে।
হঠাৎ একদিন খবর আসে উমার শ্বশুর বাড়িতে রান্না করতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মারা গেছে। আর তার মেয়ে উমাকে বাঁচাতে গিয়ে মালতির মুখ পুড়েছে । মালতী সেই সময় উমার বাড়িতে উপস্থিত ছিল, তাই এটা দুর্ঘটনা নয়, জেনেও ভুবন কাকুর মত গরিব মানুষ সত্যতা প্রমাণ করার ধৃষ্টতা দেখাতে পারেন নি।
🌐 পড়ুনঃ- অতৃপ্ত প্রেমের করুন পরিস্থিতি
অন্যদিকে মহাজন সুবীর পাওনা টাকার জন্য ভুবনের বাড়ি হানা দেয়। আসলে সুবীর তো মালতী কে বিয়ে করতে চাইতো কিন্তু মালতির মুখ পুড়ায় তার সব আশায় জল পড়ে যায়।ভুবন বাবু টাকা মেটাতে না পারায় তার দলিল দস্তাবেজ জোরপূর্বক কেড়ে নিয়ে যায় সে। ভুবন বাবু এই অপমান সহ্য করতে না পেরে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।
ভুবন কাকার এই অকাল মৃত্যু ওনার স্ত্রী সরলা কাকি মেনে নিতে পারেন নী। উনার সাথে সরলা দেবী ও প্রাণ হারান। সবাই বললো সরলা দেবী সতী নারী তাই স্বামীর সাথে চলে গেল। আসলে সরলা কাকি কীটনাশক খেয়ে ছিলেন। সুধীর ফেসে যেতো। যাইহোক মালতীর বোন রমাকে বিয়ে করে ও বিষয়টি ধামাচাপা দিলো।
এর মধ্যে উনাদের একমাত্র পুত্র সন্তান মানস স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে দেখে তার বাবা মা অচৈতন্য হয়ে পড়ে আছে, ডাকলেও সাড়া দেয় না, বুঝতে পারে তার বাবা মা আর জীবিত নেই। অথচ পাড়ার লোকেরা তার বাবা মায়ের খুনির সাথেই তার দিদির বিয়ে দিচ্ছে দেখে সে একটু অন্যরকম হয়ে গেলো।কি যেন ভাবতে ভাবতে থাকলো সব সময়।ছেলেটি বাড়ি ত্যাগ করে এক অন্ধকারে তলিয়ে গেলো। গ্রামের মানুষ আর কোনোদিন তার খোঁজ পায়নি।
হঠাৎ এতো বছর পর গ্রামের এক পথ দুর্ঘটনায় এক অজ্ঞাত পরিচয় যুবক সন্ন্যাসীর মৃত্যু হয়েছে। এই সন্ন্যাসী মালতির খোঁজ খবর নিচ্ছিলো।অনেকেই দাবি করছে সন্ন্যাসীটি ওই ভুবন চাষির হারিয়ে যাওয়া ছেলে। কিন্তু তারা সঠিক চিহ্নিত করতে পারছিল না। ভুবন বাবুর ছোট মেয়ে মালতী কে গ্রামবাসী শনাক্ত করতে ডাকলে , সে জানায় মৃত সন্ন্যাসীটি তার ভাই। এরপর মালতী ও মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
এখন গ্রামের মানুষরা পাগলা গারদে নিয়ে চললো তাকে।
মালতী সত্যি মুখপুড়ি। ও যখন রূপবতী ছিল তখন ওর চরিত্র খারাপ বলে আমার সাথে ওর বিয়েতে রাজী হয় নি আমার বাড়ি লোকজন। আজ মুখ পুড়িয়ে চরিত্র হীন কলঙ্ক মুক্ত হয়েও নতুন জীবন শুরু করতে পারলো না সে।
আমি যখন বিছানায় মুখ গুঁজে কাঁদছি। দেখি মায়ের গুরু ভাই নিত্যানন্দ মামা স্বংয় হাজির হয়েছে আমার ঘরে। নিজেকে সামলে প্রণাম করলাম উনাকে। উনি বললেন ” কেঁদো না কেঁদো না , গোঁসাই। সব প্রভুর খেলা। ওর পূর্ব জন্মের কর্ম ফল, এবাড়িতে তোমার সাথে মেয়ে বিয়ে দেবার জন্য এখনো রাজী চৌধুরি বাবু। মালতী মুখপুড়ির পূর্ব জন্মের কর্ম ফল ওকে ভোগাচ্ছে।”
মা বললো ” না না আমি এই লগ্নে বিয়ে দেবো চৌধুরি বাবুর মেয়ে সুচিত্রার সাথে। মলতির চিকিৎসার দায়িত্ব চৌধুরি দা তো নিয়েছে। আমি কোন কথা শুনবো না। কাঁদিস না বাবা।” বলে মা জড়িয়ে ধরলো আমাকে। মায়ের নিশ্বাস গরম ।
বুঝতে পারলাম না , এটা স্বস্তির নিশ্বাস না দীর্ঘ শ্বাস!
🖊 গল্পের ভাবনায়- মানব মণ্ডল
🌐 পড়ুনঃ- ভুল বোঝাবুঝি ও হারানো ভালোবাসার গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক- মুক্তাক্ষর
টেলিগ্রাম- মুক্তাক্ষর
WhatsApp কমিউনিটি- মুক্তাক্ষর