আজকের ভূতের গল্পটি শুধুমাত্র একটি গল্প নয়। এই ভয়ংকর ভুতের গল্প টিতে রয়েছে এমন এক রহস্যময় গ্রাম নিয়ে কথা যেটি শুনলে আপনাকে দ্বিতীয়বার হয়ত ভাবাবে।
ভয়ংকর ভুতের গল্পঃ- “ভুতানুটি”
বিষয় টা ঠিক সেটা নয় যেটা তুমি ভাবছ হয়ত তোমার কল্পনার বাইরে এই ভাবনা।
কেন কেন ঠাকুর মশাই, আপনি হঠাৎ করে এমন কেন বলছেন ?
তাহলে কি গ্রামে কোনো বড়ো অমঙ্গল ঘটতে চলেছে !
বিসু পাশ থেকে বলে উঠলো , ওরে বিধু থাম থাম , ঠাকুর মশাইকে বলতে দে। আপনি বলুন ঠাকুর মশাই , কি বলতে চাইছিলেন , মন খুলে বলুন , আপনি আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারেন , আমরা আপনার কথা কাউরে বলব না।
ঠাকুর মশাই খানিকক্ষণ চুপ থাকার পর মুখ খুললেন। আর বিধুর দিকে তাকিয়ে কি যেন একটা অং চং টং বলে মন্ত্র পড়তে শুরু করলেন। বেচারা বিধু তো ভয়ে ধুতিতেই মূত্র বিসর্জন করে ফেললো। কিন্তু আমি একাগ্র চিত্তে ঠাকুর মশাই এর কার্যকলাপ দেখতে লাগলাম ।
কলকাতা থেকে ২৬৩ মাইল দুরে আমাদের এই ছোট্ট গ্রাম । তবে গ্রামের নামের মধ্যে লুকিয়ে আছে বিশেষ রহস্য। আমাদের গ্রামের নাম ভুতানুটি । পূর্বপুরুষদের কাছে গ্রামের নামের উৎপত্তি জানতে চাইলে তারা সব সময় এই বেকে বসেছেন । তাদের মতে এই নামের উৎপত্তি যে জানতে চায় সেই অকালে প্রাণ হারায়। তাই আমরা আমাদের কৌতূহল চেপে রাখা ছাড়া অন্য কোনো উপায় পায়নি ।
তবে ঘটনাটা সেদিন না ঘটলে আজ বোধহয় ঠাকুর মশাই অবধি পৌঁছাতেই পারতাম না আর জানতেও পারতাম না , আসল রহস্য কি !
পড়ুনঃ- একটি অসমাপ্ত প্রেমের গল্প
বিধু , পটল, বিশু আর আমি মিলে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম গ্রামের নিষিদ্ধ নদী ঘাটে। কথায় আছে নাকি সে ঘাটে একবার যে যায় সে আর প্রাণ নিয়ে ফেরে না। বিধু পটল ভয় পেয়ে যেতে রাজি না হলেও , আমার আর বিশুর চাপে পড়ে যেতেই হলো শেষমেশ ওদের। তখন সন্ধ্যা প্রায় হবো হবো, এমন সময় মনে হলো মাছ ধরার জন্য যে ছিপ নিয়ে গিয়ে পেতেছিলাম সেটাতে কিছু আটকেছে। একার জোরে তুলতে পারলাম না , সঙ্গে ডেকে নিলাম আরও তিন সঙ্গীকে । সবার মিলিত প্রচেষ্টায় যেটা বেরিয়ে এলো, সেটা দেখার প্রত্যাশা আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি।
জলজ্যান্ত একটা মাথা কাটা মাছ , তার পুরো শরীর বেয়ে লাল টকটকে রক্ত তে ঘাট টা ভরে গেলো। লম্বায় সেটা প্রায় ৩.৫ ফুট হবে। তবে সেটাকে নিয়ে ধারণা করার আগেই পেছন ফিরে দেখলাম তিন সাথি আমার জীবন পণ করে দৌড়াচ্ছে , তাই একার ওপর ভরসা হারিয়ে আমি ওদের সঙ্গ নিতে দৌড় দিলাম ওদের পেছনে ।
ঘটনার পরের দিন সকালে আবার গ্রামের জন দশেক ছেলেকে জোগাড় করে পাড়ি দিলাম নদীর ঘাটে। কিন্তু না , যেটা ভেবেছিলাম সেটা হলো না , আমার ছিপ সমেত ওই গলা কাটা মাছটা দুটোই নিখোঁজ। গ্রামের ছেলেরা তো আমায় নিয়ে কথা রীতি ইয়ারকি ঠাট্টা করতে করতে যে যার বাড়ি ফিরে গেলো।
এদিকে আমার তিন সঙ্গী সেদিন থেকে অদ্ভুত একটা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। কোনো ওষুধ পথ্য কাজে লাগছে না , শুধু মাছ খেলে খানিকক্ষণের জন্য জ্বরটা ছাড়লেও , খনিক বাদে সেটা আবার ফিরে আসছে । কোনো ডাক্তার কবিরাজ বাদ যায়নি শেষমেশ ওদের নিয়ে দ্বারস্থ হতে হলো গ্রামের পুরোনো ঠাকুর মশাইয়ের কাছে। তিনিই একমাত্র শেষ ভরসা ।
সত্যিই তাই , ঠাকুর মশাইয়ের দেওয়া চরণামৃত খেয়ে ওদের জ্বরটা ছেড়ে গেলো । তবে পুরো ঘটনাটা শুনে ঠাকুর মশাই কিন্তু বাকিদের মত কৌতুক করলেন না । কিন্তু তার নিস্তব্ধতায় বিধু ভয় পেয়ে জিজ্ঞাসা করলো গ্রামের কোনো অমঙ্গল হবে না তো! কিন্তু তিনি আমাদের বললেন আমরা যেটা ভাবছি সেটা ঠিক না । বিষয় টা সম্পূর্ণ আলাদা। মন্ত্র দিয়ে তিন বন্ধুকে ঝাড়ার পর , আমায় কাছে ডেকে বললেন , এদের সাথে তো তুমিও ছিলে তাহলে তোমার কেন কিছু হয়নি জিজ্ঞাসা করবে না !
হ্যাঁ হ্যাঁ ঠাকুর মশাই , ঠিক ধরেছেন , এই প্রশ্নটা আমার মনে বেশ কয়েকদিন ধরে ঘুরপাক খাচ্ছিল। কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম না সেদিনের ঘটনার জন্যই কি এরা অসুস্থ নাকি অন্য কিছু।
ঠাকুর মশাই শান্ত গলায় বললেন। আজ থেকে কয়েক শতক আগে এই গ্রামে এক তান্ত্রিক থাকতো , তখন এখানে জনবসতি ছিল আরো কম । তবে গ্রামের সহজ সরল মানুষেরা তান্ত্রিকের ওপর বিশ্বাস করে, সে যা বলতো তাই করতো । এভাবেই তান্ত্রিক প্রতি অমাবস্যায় গ্রামের একটি করে মানুষকে মাছ সমেত যজ্ঞ যে আহুতি দিত। আর তার রক্ত সমেত মাছটিকে নদীর জলে ফেলে আসতো ।
গ্রামের মানুষ যখন অন্ধবিশ্বাস ভেদ করে বুঝল এই তান্ত্রিক তাদের ক্ষতি চায় তখন তারাই এই তান্ত্রিক কে মেরে নদীর জলে ফেলে দিয়েছিল । তারপর মৃত মানুষদের স্মরণে গ্রামের নাম দেয় ভুতানুটি । আর ওই তান্ত্রিক এর আত্মা এখনো পর্যন্ত সেই ঘাটে আসা আগন্তুক দের উপর চড়াও হয়। তান্ত্রিকের আত্মার একটা বিহিত করে দিলেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। যাদের মৎস্য রাশি তাদের ওপর ভর করে এই তান্ত্রিকের আত্মা। কিন্তু তুমি কুম্ভ রাশি তাই বেঁচে গেছো।
সত্যিই এত বছরের কৌতূহল তো মিটলো । কিন্তু আমার মনে অন্য এক প্রশ্ন নাড়া দিচ্ছে, তান্ত্রিকের আত্মা শান্তি পাবে কীভাবে?
আলোরানি মিশ্র
গল্পের কালিতে-
পড়ুনঃ- জানেন কি চিয়া সিডের উপকারিতা!
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- ফেসবুক- মুক্তাক্ষর টেলিগ্রাম- মুক্তাক্ষর WhatsApp Group- মুক্তাক্ষর