একটি বাস্তব ঘটনা কে কেন্দ্র করে আজকের বাস্তব জীবনের গল্পটি। জীবন নিয়ে টিকে থাকা সহজ যে নয়, কেন সহজ নয় তার স্বাদ গল্পতেই পাবেন। বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে অবলম্বন করে লেখা এই গল্পটি সম্পর্কিত মতামত জানাতে ভুলবেন না যেন!
বাস্তব জীবনের গল্পঃ- “অপূর্ণভবা”
“সাবধানে থাকিস মা , আর কোনো অসুবিধা হলে কিন্তু কল করবি। সময়ে খেয়ে নিবি।”
“হ্যাঁ মা হ্যাঁ, ঠিক আছে আমি এবার রাখি , আমার কিন্তু লেট হয়ে যাচ্ছে।”
“রাখ মা , সাবধানে থাকবি ।”
মায়ের সাথে কথা শেষ করেই রুমি হন্তদন্ত হয়ে মেডিক্যাল কলেজের দিকে ছুট দিলো । সেখানে নাইট শিফট এ জয়েন করে নিজের ড্রেস চেঞ্জ করে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড এর দিকে পা বাড়ালো । ঘণ্টা কয়েক পর রুমির মা বারবার কল করতে লাগলেন মেয়েকে কিন্তু কিছুতেই রুমিকে ফোনে পেলেন না। কি করবেন বুঝতে না পেরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লেন।
প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মেয়ে রুমি , অল্প বয়সেই পিতৃহারা মেয়েটা , মায়ের নয়নের মনি হয়ে বড়ো হয়ে উঠেছিল। ছোট বেলায় যখন তার বাবা কাজ থেকে বাড়ি ফিরত, রুমি কে পড়তে দেখে বলতো বড় হয়ে ডাক্তার হবে আমার ঝাঁসির রানি টা ।
“কি রে মা পারবি তো বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে ?”
রুমি তার বাবার কোলে লাফিয়ে উঠে উত্তর দিত । “আমি বোলো হয়ে অলেক বোলো দত্তার হবো বাবি।”
আধো আধো মেয়ের ওই কথাই ছিল তার বাবার কাছে কাজের প্রেরণা। আর তাই যখন রুমির বাবা মারা গেলো তখন রুমির মা দায়িত্ব নিলেন মেয়েকে তার বাবার স্বপ্ন পূরণ করানোর।
রুমিও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে , এন্ট্রান্স এক্সাম দিয়ে চান্স পেলো কলকাতার এক নামি সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারি পড়ার।
এখান থেকেই শুরু হলো তার জীবনের নতুন অধ্যায় । ভর্তির পর থেকেই তাকে সিনিয়র দের নানা অত্যাচারের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তার পরেও মায়ের মুখ চেয়ে মেয়েটা সব সহ্য করে গেছে। তার মাকে কোনোদিনও কিছু জানায় নি। জানতেও দেইনি তার ঝাঁসির রানি এখানে কীভাবে দিনের পর দিন নানা নির্যাতনের সম্মুখীন হচ্ছে।
🌐 পড়ুনঃ- বাস্তব জীবনের একটি শিক্ষণীয় গল্প
বাকি সব দিনের মত সেদিনও রুমি ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড এ গিয়ে পেশেন্ট দের দেখে , কেবিনে এসে খেতে বসলো। ইতিমধ্যে তার ফোনে বারবার একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসতে শুরু করলো। প্রথমে গুরুত্ব না দিলেও পরে ইমার্জেন্সি ভেবে সে ফোনটা তুলল। ওপার থেকে ভেসে এলো একটি পুরুষের গলার আওয়াজ। সে রুমিকে বলতে লাগলো ” তাড়াতাড়ি আসুন ম্যাডাম এখানে একজন পেশেন্ট এর খুব ক্রিটিক্যাল অবস্থা , আপনি তিন নাম্বার ফ্লোরে তাড়াতাড়ি আসুন ।
খাবারের প্রথম গ্রাস টা মুখে না নিয়েই রুমি স্টেথোস্কোপ টা হাতে নিয়ে ছুটে গেলো তিন নাম্বার ফ্লোরের দিকে। হঠাৎ সেই ফ্লোরে পৌঁছতেই পুরো হল টা অন্ধকার হয়ে গেলো। রুমি খেয়াল করলো তাড়াহুড়ো তে সে ফোন টা টেবিলেই নামিয়ে এসেছে। নিচের সিঁড়ির দিকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে কে যেন তার হাত টা শক্ত করে টেনে ধরলো। চিৎকার করার আগেই রুমাল দিয়ে তার মুখ ঢেকে , হাতে পায়ে বাঁধন দিয়ে , একটা একটা করে বস্ত্র ছিঁড়ে দিতে লাগলো কয়েকজন মিলে ।
সে বেশ বুঝত পারল একজন নয় , এখানে বেশ কয়েকজন রয়েছে , তারা হাসতে হাসতে রুমির ওপর অত্যাচার করত শুরু করলো । হঠাৎ করে তাদের মধ্য একজন বলে উঠলো , সূর্য তুই একাই কি মজা নিবি নাকি , আমাদের ও সুযোগ দে এবার।
রুমির যন্ত্রণায় কাতর শরীর টা ওই নাম টা শুনে শিউরে উঠলো। এই নাম তো এই কলেজের চেয়ারম্যানের ভাইপোর।
সূর্য রেগে ছেলেটাকে একচর মেরে বলল ‘ ননসেন্স নিয়ে নিলি তো আমার নাম টা , আর এই মেয়েকে বাঁচানো যাবে না। যে যেভাবে পারছিস ছিঁড়ে খা একে , শেষে লাশ টা ফেলে দিয়ে যাবো এখানেই, ধুর মুড টাই নষ্ট করে দিলি “।
পরের পর একজন করে এসে যেন তাদের চির জন্মের রাগ রুমির ওপর আছড়ে দিলো। মেয়েটা যন্ত্রণায় কাঁদতে কাঁদতে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। বারবার তার মায়ের মুখটা ভেসে উঠলো তার চোখের সামনে। মনে মনে বলতে লাগলো পারলাম না মা আমি , পারলাম না । তোমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারলাম না। বাবার কাছেই ফিরে যাচ্ছি আমি। তুমি সাবধানে থেকো মা , আমাকে এই নারকীয় অত্যাচার যারা করলো তাদের শাস্তি দিও মা , শাস্তি দিও।
ছেলেগুলো রুমির দেহের এক একটি অঙ্গকে অপারেশন করার অস্ত্র দিয়ে ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলল। নাক মুখ চেপে শেষমেশ সেখানেই তাকে শেষ করে , বিজয়ীর হাসি মুখে নিয়ে লাশ টা কে ফেলে তারা চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের গ্রুপে রুমির উলঙ্গ নিথর দেহ ছবি ছড়িয়ে পড়ল। সাধারণ স্টুডেন্ট থেকে শুরু করে মহিলা কমিশন এর সবাই এসে তদারকি করার চেষ্টা করলো। কিন্তু পুলিশ তাদের কাউকেই ভেতরে আসতে দিলো না। রুমির দেহ টা কে পৌঁছে দেওয়া হলো তার মায়ের কাছে ।
যে মেয়ের কাল থেকে খোঁজ না পেয়ে চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলেন সেই মেয়ের নিথর দেহ সামনে দেখে রুমির মা নিজেকে সামলাতে পারলেন না। সেখানেই তিনি মূর্ছা গেলেন ।
সন্ধ্যায় খবর এলো কোন এক হাসপাতালে গার্ড কে পুলিশ দোষী রূপে সাব্যস্ত করেছে। আর তাকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকি তদন্ত করে তবেই পুলিশ কিছু জানাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
🌐পড়ুনঃ- একজন মেয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
রুমির মা শেষ পর্যন্ত জানতেও পারলেন না তার মেয়েকে কারা কীভাবে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে। পুলিশ আর প্রশাসন কীভাবে বিকিয়ে গেলো অর্থকরী প্রভাবশালী মানুষদের পায়ের তলায় সেটাও রয়ে গেলো তার অবগত। রুমির অত্যাচারীদের শাস্তি পাওয়া হলো না। তাদের সেই বিজয়ীর হাসি রয়েই গেল।
হেরে গেলো একটা মেয়ের সম্মান, অধিকার আর সমাজের উঁচুতলার মানুষদের কাছের অত্যাচারের প্রতিবাদ। এইভাবে রুমির মত ভারতের ৮০ শতাংশের অধিক , মেয়েরা তাদের কর্মস্থানে নানা হেনস্থার সম্মুখীন হন । তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মেয়েরাই সম্মান এর ভয়ে সবটা মেনে নেয়। যারা আত্মসম্মান কে বাঁচাতে সামাজিক সম্মান কে তুচ্ছ করে প্রতিবাদের আওয়াজ তুলতে যায় তাদের ঠিক রুমির মত করেই প্রভাবশালী দের হাতে শেষ হতে হয়।
হ্যাঁ দেশ আমাদের উন্নত , নারী পুরুষ সমানাধিকার রয়েছে ভারতের সংবিধানে। কিন্তু সেটা বই খাতাতেই লিপিবদ্ধ । সমাজে আজও পুরুষ এর দৃষ্টিভঙ্গি আর নারীর জীবনভঙ্গি কোনোটাই বদলাতে পারেনি। এইভাবে কত দিন আর চলবে? কতদিন ?
সুবিচার কবে পাবে মেয়েরা নাকি মেয়েদেরও অবলম্বন করতে হবে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি ?
🌐পড়ুনঃ- তাজমহল সম্পর্কে যে রহস্যময় তথ্য গুলি আপনার জানা উচিত
– আলোরানি মিশ্র
🖊গল্পের নিথর বাস্তবতায়–
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে-
ফেসবুক- মুক্তাক্ষর
টেলিগ্রাম- মুক্তাক্ষর
WhatsApp Group- মুক্তাক্ষর