প্রেম আর তারপর প্রেমের পরশে প্রেগন্যান্ট অবশেষে প্রেমে ধোকা। আজ রইল লীনার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। কীভাবে সে নিজেকে সামলে নিয়ে নিজেকে উপযুক্ত করেছে তারদিকে সমাজের তোলা আঙ্গুল কে সে ভেঙে দিয়েছে তার গল্প রইল আজ।
ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পঃ- “জীবন সংগ্রাম”
মা, ও মা , বলো না গো বাবা মানে কী ?
আমার সব বন্ধুরা তাদের বাবাকে নিয়ে গল্প করে , কত কি বলে , আর আমি চুপটি করে ওদের গল্প এক কোনায় বসে শুনি।
আচ্ছা মা , এই বাবা নাকি সবার জীবনে থাকে আর সেই নাকি হয় মেয়েদের জীবনের প্রথম হিরো। তাহলে আমার কেন কোনো বাবা নেই মা , বলো না , বলো না , তুমি বারবার আমাকে বাবার কথা জিজ্ঞাসা করলেই এড়িয়ে যাও । আজকে তোমাকে বলতেই হবে বাবার কথা । নয়তো আমি কিচ্ছু টি মুখে তুলবো না।
মেয়ের মুখে , বাবার নাম শুনে লিনা কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়ে , ধীরে ধীরে সে বিছানায় এলিয়ে দেয় তার শরীর আর মৃদু স্বরে তার মেয়ের বাবা ডাক টা বারবার তার কানে বাজতে থাকে । মনে পরে যায় তার সেই অতীত…
বছর দশেক আগে , লিনা তখন কলেজে সদ্য প্রথম বর্ষের ছাত্রী , নতুন নতুন স্মার্ট ফোন পেয়েছে সে হাতে। আর সেটাতে সে জানতে পেরেছে এই ছোট মোবাইলের মধ্যে সারা বিশ্ব লুকিয়ে আছে । সারা বিশ্ব যেন তাকে হাত ছানি দিয়ে ডাকছে , আর সেই ডাকের সাড়া দিতেই সে ইনস্টাগ্রাম অ্যাপ টিকেই প্রথম বেছে নেয় । এরপর সে মাঝে মধ্যে নিজের কিছু ছবি ও সেখানে আপলোড করতে থাকে।
এই অচেনা বিশ্বের মধ্যে দিয়েই যে জীবন সঙ্গী খুঁজে পাওয়া যায়, সেই ধারণা সে তার বন্ধুদের কাছ থেকেই আয়ত্ত করে নেয়। সে লক্ষ্য করে তার আপলোড করা প্রতিটি ছবিতে একটি ছেলে লাইক কমেন্ট করে । এমনকি তার ইনবক্স এ বারবার হাই হ্যালো বলে নক ও করতে থাকে। প্রথম প্রথম লিনা এসব ব্যাপার গুলোকে পাত্তা না দিলেও পরে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারেনি ।
ছেলেটি ম্যাসেজ করলে তাকে ঘুরে রিপ্লাই দিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে লিনা ছেলেটির সাথে কথা বলতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। আর তারপরেই হঠাৎ একদিন ছেলেটি তাকে ভালোবাসার প্রস্তাব দেয়, সে জানায় ,সে লিনাকে অনেকদিন আগে থেকে চেনে , সে নাকি লিনাকে অনেকবার সামনে থেকেও দেখেছে কিন্তু কখনও কথা বলার সাহস পায়নি। তাই লিনা আরো ভরসা পেয়ে ছেলেটার প্রস্তাব স্বীকার করে নেয়। ইনস্টাগ্রাম থেকে হোয়াটসঅ্যাপে তাদের কথা শুরু হয়।
🌐পড়ুনঃ- এই ধাঁধা গুলির উত্তর দিতে পারলে আপনি জিনিয়াস
লীনা ভাবতে শুরু করে , ছেলেটি তাকে সুখে রাখবে , সেই ওর জীবনসঙ্গী। ছেলেটির লিনাকে নিয়ে পসেসিভ ব্যবহার , লিনাকে আরো মুগ্ধ করে তোলে। যেহেতু ছেলেটি ব্যাঙ্গালোর এ কাজ করে আর লিনার বাড়ি আসানসোল তাই এই দূরত্ব সম্পর্কে তাদের সরাসরি দেখা হয়ে উঠে না । অনলাইন কে মাধ্যম বানিয়েই তারা টানা ছয় মাস ভালোবাসার সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যায়।
হঠাৎ একদিন ছেলেটি লিনাকে জানায় , সে বাড়ি ফিরবে অর্থাৎ আসানসোলে ফিরবে , তাই এবার তাদের সরাসরি দেখা হবে । লীনা উদগ্রীব হয়ে উঠে ছেলেটির জন্য। সে প্রহর গুনতে শুরু করে । আর দেখতে দেখতে সেই দিনটা চলে আসে যেদিন তারা একে অপরের সম্মুখীন হয়।
প্রথম দেখায় লিনা ছেলেটির সাথে কিছুটা সময় গল্প করে কাটাতে চায়। কিন্তু ছেলেটি তাকে বারবার বুঝাতে থাকে , তারা তো সারাদিন চ্যাট এ কথা বলে , তাদের মনের ঘনিষ্ঠতা যথেষ্ট আছে তাই তাদের শারীরিক ঘনিষ্ঠতা টাও জরুরি । একে অপরকে আরেকটু ভালোভাবে ঘনিষ্ঠ ভাবে জানবার উপায় এই শারীরিক সম্পর্ক। এসব কথা শুনেও লিনা কিছুতেই রাজি না হলে , ছেলেটি আশ্বাস দেয় , তাদের বিয়ে তো হবেই হবে , তাই লিনা যেন তাকে একটি বার তার কাছে আসার সুযোগ দেয়।
লীনা ছেলেটির অনুরোধ বারবার ফেলতে না পেরে , শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েই যায়। আর ধীরে ধীরে হোটেলের ওই নিস্তব্ধ রুম টাতে দুটি শরীর মিলে একাকার হয়ে যায়।
এরপর কেটে যায় তিন মাস। ছেলেটি লিনাকে আশ্বাস দিয়েই যায়, সে পরের বার বাড়ি ফিরলে তাদের সম্পর্কের কথা বাড়িতে জানাবে। লিনাও সেই আশায় দিন গুনতে থাকে।
হঠাৎ লিনা নিজের মধ্যে কিছু পরিবর্তন বুঝতে পারে। তার কোনো খবর এই সহ্য হয় না , যাই খায় বমি হয়ে যায়। কাউকে কিছু না জানিয়েই লিনা প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে। আর জানতে পারে সে দুইমাসের প্রেগনেন্ট । তার মধ্যে বেড়ে উঠছে একটি নিষ্পাপ শিশু । এই খবরটি সে জানার পরেই সেই ছেলেটিকে ভয় মিশ্রিত আনন্দের সাথে জানায় যে সে বাবা হতে চলেছে । ছেলেটি এই কথা শুনে লিনাকে যাচ্ছেতাই ভাবে অপমান করে তার কল কেটে দেয়। আর মুখের ওপর জানিয়ে দেয়, এই বাচ্চার বাবা সে নয়, আর সে কোনো দায়িত্ব নিতেও রাজি নয়। তাই যেন আজ থেকে লিনা তার সাথে কোনো সম্পর্ক না রাখে।
🌐পড়ুনঃ- একটি অসমাপ্ত কষ্টের প্রেমের গল্প
ছেলেটির কোনো কথার প্রতিউত্তর দিতে পারেনা লিনা । তার চোখের সামনে যেন তার বানানো স্বপ্নের ঘর , তাসের ঘরের ন্যায় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় । লীনা তার প্রেগন্যান্সির কথা তার মা কে জানায় , এরপর তার মা বাবা ছেলেটির অনেক খোঁজ করে কিন্তু কোথাও কোনো হদিস পাওয়া যায় না । তারা সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের নিজেদের সম্মান রক্ষার্থে তারা লিনার বাচ্চাটিকে নষ্ট করে দেবে।
তাদের এই প্রস্তাবে লিনা কিছুতেই রাজি হয় না। এক পূর্ণিমার রাত্রে সে একটি ছোট্ট ব্যাগ নিয়ে অজানা ভবিষ্যৎ কে সাথে করে বেরিয়ে পড়ে বাড়ি থেকে। এরপর সে হোটেলের বাসন ধুয়া থেকে শুরু করে বাগানের মালির কাজ করা কোনোটাই বাদ দেইনি । তবুও সে তার সন্তান কে নষ্ট হতে দেয়নি। সব সংগ্রাম পেরিয়ে সে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যায় , আর বছর ফিরতেই জন্ম দেয় একটা ফুটফুটে মেয়ের।
দেখতে দেখতে মেয়েকে সাথে নিয়ে তার নয় বছর পেরিয়ে যায়। এখন সে নিজে একজন সরকারি পুলিশ অফিসার । তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিশোধ সে নিয়েছে। ওই ফ্রড ছেলেটিকে সে আইনি ভাষায় শাস্তি দিতে পেরেছে। পেরেছে নিজেকে আর নিজের মেয়েকে বিচার দিতে ।
তবে তার ছোট্ট মেয়েটি এখনো পর্যন্ত আইনের এত মার প্যাঁচ বুঝে উঠেনি। তাই সে বারবার বাবার কথা জানার চেষ্টা করে তার মায়ের কাছে।
তবে সেদিন মেয়ের মুখে বাবার ডাক শুনে অজ্ঞান হওয়ার পর বিছানা থেকে উঠতেই লিনা খেয়াল করে তার মেয়ে তার কোলে ঘুমাচ্ছে। সে উঠতেই তার মেয়ে তাকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরে আর বলতে থাকে , মা , আমি আর কখনও ওই বাবাকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করব না। আমি জানি তুমিই আমার মা , আর তুমিই আমার বাবা , তুমিই আমার সব।
মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে লিনা বলে ” মা , জানিস এই পৃথিবী টা খুব সুন্দর , কিন্তু এখানের সব মানুষ গুলো সুন্দর নয়, তাই এই সুন্দর পৃথিবীকে সুন্দর ভাবে দেখতে হলে দৃষ্টি ভঙ্গি বদলাতে হবে , নারী শোষণ থেকে নারীকেই শাসকের ভূমিকায় নামতে হবে । পারবি তো মা তুই , পারবি বল নিজেকে সবার থেকে আলাদা করতে ?
“পারবো মা, আমি পারবো , আমি বড় হয়ে তোমার মত মা দুর্গার মত হয়ে উঠব।”
🌐পড়ুনঃ- তাজমহল সম্পর্কে যে তথ্য গুলি আপনি জানেন না।
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- ফেসবুক- মুক্তাক্ষর টেলিগ্রাম- মুক্তাক্ষর WhatsApp Group- মুক্তাক্ষর