Spread the love

ভাই বোনের ভালোবাসা গল্প। ভাইফোঁটা উপলক্ষে ভাই-বোনের আবেগঘন গল্প। কালীপূজার পবিত্র দিনে জিনিয়া আর তার দাদার পুনর্মিলনের করুণ কাহিনী। পরিবারের বন্ধন, ভালোবাসা আর মান-অভিমান কেমন করে সব ভুলিয়ে দেয়, পড়ুন এই হৃদয়ছোঁয়া গল্পে।

“ভাইফোঁটা”: সম্পর্কের মর্ম আর ভাই-বোনের বন্ধন

জিনিয়া এবার কী হয়েছে বলতো তোমার ?

গ্রামে আমাদের একমাত্র পূজা হলো কালী পূজা , যেই পূজার সার্বিক দায়িত্ব তুমি প্রতিবছর নিজের হাতে তুলে নাও। কিন্তু এবার ! এবার তোমার মধ্যে অদ্ভুত রকম ব্যবহার লক্ষ্য করছি , তুমি দায়িত্ব তো দূরের কথা , একবারও মন্দির চত্বরে মাথা ঠেকাতেও গেলে না?

স্বামীর এরূপ প্রশ্নে বিন্দুমাত্র বিচলিত হলো না জিনিয়া । সে নিস্তব্ধ হয়ে জানালার ওপাশে দেখতে লাগলো। আর বলে উঠলো , দেখতে পাচ্ছ ভার্গব , ওই ছেলে মেয়ে দুটিকে, ওরা নিশ্চিত ভাই বোন …..। দেখো কি সুন্দরভাবে বোনকে ভিড় থেকে বাঁচিয়ে একপাশে ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কি সুন্দর লাগছে তাই না!

ভার্গব জিনিয়ার কথা শুনে কিছুটা হলেও অনুমান করতে পারল , তার মহারানীর এরূপ ব্যবহারের আসল কারণ। পেছন থেকে গিয়ে জিনিয়াকে ঝাপটে ধরে , শান্ত গলায় জিজ্ঞাসা করলো , কি গো দাদার জন্য মন খারাপ করছে তোমার ?

জিনিয়া উদাসীন গলায় উত্তর দিলো , তুমি জানলে কীভাবে ?

ভার্গব : বুঝি বুঝি ম্যাডাম আমি আপনার সমস্ত মনের কথা চুরি করতে জানি। কিন্তু এটা বুঝতে পারছি না , এত বছর পর তুমি এবার হঠাৎ করে এতটা !
জিনিয়া : এতটা মানে ? কি এতটা ? কি বলতে চাইছ তুমি ? আমার হাসির আড়ালে চেপে রাখা দুঃখ আর কষ্টের ভাষা বোঝবার ক্ষমতা সত্যিই কারো নেই , কারোর না ।

ভাই বোনের ভালোবাসা গল্প
ভাই বোনের ভালোবাসা গল্প

ভার্গব মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো , কি বলছে এইসব পাগলীটা , এগুলো অবশ্য ওর রাগের কথা। তাও কথাটা তো সত্যিই এতগুলো দিন হয়ে গেলো , কেটে গেলো বেশ কয়েকটা বছর কই ওর পরিবারের কেও তো একবারের জন্যও খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলো না , মেয়েটা কেমন আছে , কি করছে , তাদের কি কোনো দায়িত্ব জ্ঞান এই নেই ওর প্রতি?

জিনিয়া ভার্গব এর বুকে মাথা দিয়ে বলতে লাগলো , মনে আছে তোমার সেসব দিনের কথা …..

আজ থেকে ১০ বছর আগে আমাদের দুজনের পরিচয় হয়েছিল শিবরাত্রির মেলায় । তুমি এসেছিলে সুদূর উত্তরবঙ্গ থেকে আর আমি এসেছিল প্রাণের শহর কলকাতা থেকে। সেই প্রথম দেখায় যে ভালো লাগলো সেই দেখা আর ভুলতে পারলাম না , পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমার সাথে পালিয়ে এলাম সব ছেড়েছুড়ে।

জানো তুমি , মা আমার ছাড়া একটা দিন ও থাকতে পারতো না , আমি ছিলাম মায়ের নয়নমণি , সেই মা আমায় ছেড়ে এতগুলো দিন কেমন আছে সেটা একবারও খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করিনি। বাবার ভয়ংকর শাসনের মাঝেও আমাকে প্রাধান্য দেওয়ার ব্যাপার টা তখন ঠিক না বুঝলেও , এখন বেশ টের পাই, কই তার খোঁজ ও তো একবারও নিতে চায়নি।

আর দাদা সে তো আমাকে সারাক্ষণ গাইড করে দিত , আমার কি প্রয়োজন না প্রয়োজন বলার আগেই হাজির করে দিত , সবদিক থেকে যেমন স্বাধীনতা দিয়েছিল তেমন নজর নজর এও রাখতো। কই সেই দাদার কথা মনে করেও, এত বছরে একবারও তার কাছে যাওয়ার সাহস করতে তো পারিনি ।
তাহলে বলো তো আসল দোষ টা কার আমার না ওদের ?

ভাই বোনের ভালোবাসা
ভাই বোনের ভালোবাসা

জানো ভার্গব আমি প্রতি বছর ভাই ফোঁটা আর রাখির দিন গুলো দাদার জন্য অপেক্ষা করে না খেয়ে বসে থাকতাম , কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হলেও আমি ওর জন্য অপেক্ষায় থাকতাম , অবশ্য ও নিজেও না খেয়েই থাকতো সারাটা দিন , তারপর বাড়ি ফিরলে হই হুল্লোড় করে একসাথে পুরো সময়টা কাটাতাম।

সেইসব দিনের কথা ভাবলে ভেতর টা কেমন যেন কেঁপে উঠে , খুব কষ্ট হয় জানো কালীপূজা এলেই , মনে পড়ে ভাই ফোটার দিনের কথা , আর সেজন্যই এবার আর……

ভার্গব ও মনে মনে বলল , জানি গো আমি সব বুঝি এখনো পর্যন্ত এই দুটো দিন গ্যাস অম্বল শরীর ভালো না , নানান বাহানা করে না খেয়েই বসে থাকো উপোস দিয়ে ।

দেখতে দেখতে কালীপূজার দিন পেরিয়ে ভাই ফোটার দিন চলে এলো , জিনিয়া সকাল থেকে শরীর দুর্বল বলে বিছানাতেই পড়ে আছে। আর সবার চোখের অন্তরালে চোখের জল ফেলে বালিশ ভিজিয়ে ফেলেছে। ভার্গব সবটা বুঝেও , সান্ত্বনা দেখানোর ভুলটা করেনি ,কারণ সে ভালো করেই জানে জিনিয়ার কোনো ব্যাপার মাথায় ঢুকলে সেটা থেকে বেরোতে বেশ সময় লাগে।

হঠাৎ বাড়ির কলিং বেল টা বেজে উঠল ।

ভার্গব বিরক্তির সুরে বলে উঠলো এই ভর দুপুরে কে হানা দিল আবার!

জিনিয়া নিরাশ সুরে বলল , যাও একবার দেখই না , কে এসেছে , অবশ্যই আমার দাদা নয় এটা।

🌐পড়ুনঃ- অসাধারণ কয়েকটি শিক্ষামূলক উক্তি

ভার্গব গিয়ে দরজা খুলতেই , থমকে গেলো , কাপা গলায় বলল , দা আ আ দা তুমি ?

আচ্ছা আচ্ছা তার মানে তুমিই এই সেই রাজকুমার যে আমার বোনটাকে আমাদের থেকে চুরি করেছ ?

না আ আ দাদা সেটা নয়। এই জিনিয়া শোনো শোনো দেখো কে এসেছে , দেখো তুমি কে এসেছে ?

জিনিয়া বালিশে মুখ গুঁজে উত্তর দিল, যেই আসুক বলে দাও আজ আমি দেখা করতে পারব না।

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে একজন বলে উঠলো , কি রে জিনি আমার সাথেও দেখা করবি না !

জিনিয়া চমকে উঠলো , এই ডাক তো তার খুব চেনা , এই নামে তো তার দাদা তাকে ডাকে, সে ঝাপিয়ে উঠে পড়ল বিছানা থেকে। এত বছর পর তার দাদাকে চোখের সামনে পেয়ে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। জিনিয়ার সাথে সাথে ওর দাদার চোখ বেয়েও কয়েক ফোঁটা জল পড়লো বোনের মাথায়।

এতগুলো বছরে কি একবারও তোর আমাদের কথা মনে পড়েনি জিনি?

জিনিয়া তার দাদার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারল না। সে আনন্দে , আত্মসুখে দিশেহারা হয়ে রান্না ঘরের দিকে ছুটে গেলো। এক বাটি পায়েস নিয়ে এসে তার দাদার মুখের সামনে তুলে ধরে বলল। এই দেখ দাদা আমি তোর জন্য পায়েস রান্না করেছি। প্রতি বছর আমি এটা তোর জন্য করে রাখি , কিন্তু কোনোবার এই …….

আচ্ছা বাবা অনেক হয়েছে , নেকি কোথাকার এতদিন কোনো খোঁজ খবর নেই আর এখন এসব বলতে এসেছে। ছাড় বাদ দে এসব, অনেক কষ্ট করে এতদিন খোঁজ করার পর জানতে পেরেছি তুই এখানে থাকিস ,অবশ্য জানতে পেরেছি কয়েক মাস আগেই কিন্তু ভেবেছিলাম একটা স্পেশাল দিন দেখে গেলেই বেশ হবে।

তাই সকাল সকাল ফ্লাইট করে রওনা দিলাম তোর বাড়ির উদ্দেশ্যে। এবার তাড়াতাড়ি ফোটার আয়োজন করতো, আর খিদা তে থাকতে পারা যাচ্ছে না । তাড়াতাড়ি কর সব.

🌐পড়ুনঃ- একজন মেয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

জিনিয়া বিহ্বল দৃষ্টিতে তার দাদার তার প্রতি ক্ষমা বোধ আর এত কিছুর পরেও এতটা ভালবাসা দেখে বুঝতে পারল ,সত্যি সে কতবড় ভুল করেছে এতদিন কারোর খোঁজ না করে । দোষী মনে হলো তার নিজেকে। কিন্তু এসব এ কথা তখন ভাবার সময় নেই।

পুনর্মিলনের গল্প
পুনর্মিলনের গল্প

সে তাড়াতাড়ি ফোটার আয়োজন করে , এত বছর পর আবার নিজের দাদাকে ফোঁটা দিয়ে , হাতে করে পায়েস মুখে তুলে দিলো। আর কাতর কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো ……

দাদা এবার থেকে তুই আমার কাছে আসবি তো ?

আসবো জিনি, ভাই ফোঁটার দিনটা অবশ্যই আসব।

ভার্গব এতদিন পর জিনিয়া আর তার দাদাকে একসাথে দেখে ,তার মনে হলো যেন বুকের মধ্যে চেপে রাখা একটা দোষী ভাব আর কষ্ট থেকে সে মুক্তি পেলো। জিনিয়ার অজান্তে , প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও ভার্গব তার দাদার সাথে যোগাযোগ করেছিল আর বারবার অনুরোধ করে তাকে জিনিয়ার কাছে আসার জন্য রাজি করিয়েছিল ।

এমনকি বারবার বলেছিল জিনিয়া যেন কোনোদিনও না জানতে পারে এই ব্যাপারে। ভার্গব এর অনুরোধেই আজ দুই ভাইবোন একসাথে। আবারো মিলে গেলো হারিয়ে যাওয়া দুই রাস্তা একি মোড়ে।

🌐পড়ুনঃ- ভুল বোঝাবোঝি ও হারানো ভালোবাসার গল্প

আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক- মুক্তাক্ষর

টেলিগ্রাম- মুক্তাক্ষর


WhatsApp Group- মুক্তাক্ষর

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top