Spread the love

জীবন নিয়ে আমাদের অভিযোগের শেষ নেই, আর সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই একটি বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্প নিয়ে আসা হয়েছে। আশা করছি গল্পটি আপনার ভালো লাগবে।

বাস্তব জীবনের শিক্ষণীয় গল্পঃ-

মাঝারি আয়তনের শহর শিলিগুড়ি। শহরের আয়তন মাঝারি হলেও চারিদিকে মানুষ আর গাড়ির ভিড়ে এই শহরটিকে অনেক ব্যস্ত মনে হয়। এই পাহাড় ঘেঁষা শহর শিলিগুড়ি তে একজন বিখ্যাত সাধু এসেছেন। সে মানুষের নানা সমস্যার সমাধান করে দেয়। তার কাছে এলে মানুষ নিরাশ হয়ে ফিরে যায় না।

এই শহর থেকে কিছু দূরে একটি গ্রামে বাস করে ধনেশ নামে এক ব্যক্তি। নাম ধনেশ হলেও কমতি রয়েছে তার ধন এ। সে সাধুর নাম শুনে এবং তার সাথে দেখা করতে চায়। ধনেশ সকাল সকাল সাইকেল নিয়ে তার গ্রাম থেকে বেড়িয়ে পরে। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে সে শহরে আসে। খুঁজে খুঁজে বের করে সেই সাধুর আস্তানা। এরপর সে সাধুকে প্রণাম করে বলে- “আমার অনেক দুঃখ, আমি অনেক দেনা তে ডুবে আছি। কেউ আমাকে সাহায্য করে না।“

bastob jiboner sikkhoniyo golpo
bastob jiboner sikkhoniyo golpo

সাধুটি এক মনে তার কথা শুনলেন এবং বললেন- “তুমি কি কাজ করো?”

ধনেশ বলল আমি ডাব বিক্রি করি কিন্তু আমার এই ব্যবসা তেমন চলে না, কোনোমতে দিনপাত করি। ধারদেনার কারণে প্রতিদিন মানুষ এসে আমাকে হুমকি দিয়ে যায়। আপনি কি আমার এই অর্থাভাব দূর করতে পারবেন। আমার জন্য এমন কিছু করুন যেন আমি আমার সমস্ত ধার দেনা মিটিয়ে দিতে পারি।“

সাধুটি মৃদু হেসে বললেন- “আমি তোমাকে একটি নীল পাথর দিচ্ছি এই পাথরটিকে তুমি এই শহরে কারো কাছে বিক্রি করে দেবে।“

🌐পড়ুনঃ- জীবন বদলানো সেরা দুটি শিক্ষণীয় গল্প

ধনেশ দেখল , পাথরটি বেশ চকচকে। সে খুশি মনে পাথরটিকে নিয়ে সাধুকে প্রণাম জানিয়ে সেই পাথরটি বিক্রি করতে শহরে ঘুরতে লাগলো।

সে একটি লোককে রাস্তায় দেখে আর তাকে পাথরটি দেখায় এবং সেটি কিনতে বলে। লোকটি পাথরটি হাতে নিয়ে নেড়ে- ছেড়ে দেখে এবং জানায় এই কাঁচের জিনিসটি তার কোন কাজে আসবে না হুম্মম্ম এটি সুন্দর বটে, সে এটার জন্য বড়জোর ৫০০ টাকা দিতে পারবে।

এটি শুনে ধনেশ বলল- “এত সুন্দর একটা পাথর এটার মূল্য মাত্র ৫০০, না বিক্রি করব না।“ এই বলে সে লোকটির হাত থেকে পাথরটি নিয়ে কার কাছে সেটি বিক্রি করা যায় খোঁজ করতে লাগলো।

বাস্তব জীবনের গল্প
বাস্তব জীবনের গল্প

পথে সে একটি ফার্নিচারের দোকান দেখে এবং সেখানে গিয়ে পাথরটি দেখায়। ফার্নিচার বিক্রিতে পাথরটিকে ভালোমতো দেখে বলে- “পাথরটি বেশ সুন্দর দেখতে, এটির জন্য সে বড়জোর ২০০০ টাকা দিতে পারবে।“

ধনেশ এবারও পাথরটি বিক্রি করল না। সে একটি সোনা বিক্রেতার দোকানে গেলো। সেখানে তারা পাথরটিকে দেখে বলল এটি আংটিতে বসানো যাবে। তারা এটার জন্য ১০০০০ টাকা দিতে রাজী হল।

এদিকে ধনেশ ভাবছে সে পাথরটিকে যদি হীরের দোকানে দেখায় কেমন হয়! ওখানে যদি কম দাম বলে তাহলে ঘুরে এসে এখানেই দিয়ে দেবো।

ধনেশ ওদের থেকে পাথরটি নিয়ে বলে- “আমি আগামীকাল আসব, এখন আমি এক জায়গায় যাব দেড়ি হচ্ছে।“

🌐পড়ুনঃ- তাজমহলের যে তথ্য গুলি জানলে চোখ উঠবে কপালে

এরপর ধনেশ পাথরটি নিয়ে একটি হিরে বিক্রেতার দোকানে যায়। সেখানে পাথরটি দেখাতেই হীরে বিক্রেতা পাথরটিকে মাথায় ঠেকিয়ে বললেন- “এই অমূল্য রত্ন কোথায় পেলে তুমি। এই রত্নের মূল্য আমার সব সম্পত্তি বিক্রি করলেও কম পরে যাবে।“

ধনেশ বুঝে যায় এই পাথরটির মূল্য অনেক আর সাথে সে এটিও বুঝে যায় যে জিনিসের কদর যেখানে সেই জিনিসকে সেখানে নিয়ে গেলেই সেই জিনিস তার মূল্য পাবে অন্যথায় সেটি মানুষের কাছে মূল্যহীন।

সাধু তাকে কী বোঝাতে চেয়েছে সে তা হাতে কলমে প্রমাণ পেয়ে গেছে। এরপর খুশিমনে সে সাধুর কাছে গিয়ে বলে- “সাধু বাবা আপনি যা বোঝাতে চেয়েছেন আমি বুঝি গেছি। এই অমূল্য রত্ন আপনি আপনার নিকট রাখুন।

motivational story in bengali
motivational story in bengali

আমি এই শহরেই এবার ডাবের ব্যবসা শুরু করব। কেননা গ্রামে শীতল পরিবেশে মানুষ ডাবের কদর বুঝে না। আর প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ডাবের গাছ রয়েছে। কিন্তু শহরের চিত্র অনেকটাই আলাদা। তাই এখানে ডাবের কদর বেশি হবে, আর আমি এখানে ব্যবসা করলে আমার অভাব দূরে যাবে।“

সব জিনিসের মূল্য সর্বত্র থাকে না। কোনোকিছুর মূল্য নির্ভর করে সেটি কার নিকট উপস্থাপন করা হচ্ছে তার উপর। ঠিক একই ভাবে আমাদের জীবনেও এরকম সময় আসে যেখানে আমরা যে ব্যক্তির কাছে মনোযোগ পাব আশা করি সেই ব্যক্তিই আমাদের কম মূল্য দেয়। এই সময়ে আমাদের উচিত সেই ব্যক্তির নিকট থেকে সরে এসে এমন ব্যক্তির কাছে যাওয়া যাদের নিকট আমাদের মূল্য আছে।

আপনার কাছে যে মূল্যবান তার সঙ্গ ছেড়ে যার কাছে আপনি মূল্যবান তার সঙ্গ ধরুন তবেই আপনার পর্যাপ্ত মূল্যায়ন হবে।

🌐পড়ুনঃ- জীবন সংগ্রামের গল্প যা প্রেরণা জোগাবে আপনার জীবনে।

আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- 

ফেসবুক- মুক্তাক্ষর 

টেলিগ্রাম- মুক্তাক্ষর 

WhatsApp Group- মুক্তাক্ষর

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top