আজকের বাস্তব জীবনের ছোট গল্প টিতে এক যোদ্ধার জীবন সংগ্রামের গল্প নিয়ে আসা হয়েছে। বাস্তব জীবনের এই গল্প সম্পর্কিত মতামত কমেন্টে জানাতে পারেন।
বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা সম্পর্ক বিষয়টাকে স্বার্থ তে রূপান্তরিত করেছি । সে আপনার বাবা হোক কি মা , দাদা হোক কি বোন, সমস্ত সম্পর্কগুলো শুধু মাত্র স্বার্থকেন্দ্রিক । কতটুকু পাওয়া যাবে সেটুকু চাহিদাতেই সম্পর্ক গুলো আবদ্ধ , তাই না !
কি কিছু ভুল বললাম কি ?
তাহলে আসুন দেখে নিন আজ একটা সম্পর্কের শেষ হয়েও না শেষ হওয়া ভিন্ন স্বাদের গল্প ।
বাস্তব জীবনের ছোট গল্পঃ- “সম্পর্ক”
রমেশ বাবু তখন সদ্য মেট্রিক পাস করে , পারিবারিক ব্যবসায় তার বাবাকে সাহায্য করার জন্য মুড়ির মিলে কাজ করতে শুরু করেছেন। নতুন নতুন কাজ শিখছেন , পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছেন । ছোট থেকে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামী দের অনেক গল্প পড়েছেন , শুনেছেনও বড়দের কাছ থেকে। তাই তার ও মনের একটা সুপ্ত ইচ্ছে ছিল , তিনি বড়ো হয়ে জেলা কালেক্টর হবেন । তাই সেই পরীক্ষায় প্রস্তুতির জন্য তিনি ধীরে ধীরে নিজেকে গড়ে তুলতে শুরু করেন । কিন্তু ভাগ্য কি সবার সহায় হয় !
রমেশ বাবুর ভাগ্য ও তার সহায় হলো না । হঠাৎ করেই তার পিতা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। তাই পুরো সংসারের দায়িত্ব তাকেই নিতে হলো। মুড়ির মিল আর বাকি সময় টা কলেজের পড়া, এই করেই তার জীবন এর ৪ টা বছর কেটে গেলো।
তবে এতকিছুর পরেও কিন্তু রমেশ বাবু হাল ছাড়েননি , তিনি ঠিক তার পরীক্ষার প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছিলেন । কিন্তু আবারো তার জীবনে ধেয়ে এলো আরেক বিপদ। তাঁর মা স্বর্গবাসী হলেন । এবারও সংসারের প্রয়োজনে তাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলো একটি ১৫ বছর বয়সী মেয়ের সাথে। এক্ষেত্রেও সংসারের কথা মাথায় রেখে , রমেশ বাবু কোনো আপত্তি জানালেন না । তিনি সসম্মানে স্ত্রী বয়সে ছোট হলেও তাকে গ্রহণ করলেন । যদিও তিনি পূর্বে একজনকে ভালোবাসতেন কিন্তু তার পরিবারের কারণেই তিনি সেই মেয়েকে বিয়ে করতে পারেন নি।
বছর ফিরতেই যমজ শিশুর বাবা হলেন তিনি। তখন পরীক্ষার প্রস্তুতির চাইতেও তার কাছে সংসার এর দায়িত্ব পালন আগে স্থান পেলো। দেখতে দেখতে চোখের সামনে দিন গুলি জলের মত পেরিয়ে যেতে লাগল, কিন্তু তার সংসারের দায়িত্বের চাপে তাকে পড়াশোনার ধারেকাছেও পৌঁছাতে দিলো না ।
এদিকে তার ছোট ভাই একটি ভালো সরকারি চাকরি পেয়ে , বিনা বাধায় বাড়ি ত্যাগ করে চলে গেলো। যখন রমেশ বাবু তাকে আটকানোর চেষ্টা করলেন , প্রতি উত্তরে তার ভাই বললো ” আজ অবধি আমাদের জন্য এমন কি করেছ তুমি , যার জন্য আমি এত ভালো কাজ পেয়েও তোমাদের সংসার টানতে যাবো ?”
🌐পড়ুনঃ- জীবন বদলানো সেরা দুটি শিক্ষণীয় গল্প
যে সংসার এর জন্য তার এত ত্যাগ , সে সংসারের মানুষের মুখ থেকে এমন উত্তর তিনি কখনও আসা করেননি । রাগে অপমানে লজ্জায় ছুটে ঘর ভেতরে ঢুকে দরজাটা লাগিয়ে দিলেন । আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন , এতদিন অবধি কাদের জন্য আমি নিজের জীবন উৎসর্গ করলাম ? এদের জন্য !যারা আমায় এত সহজেই অস্বীকার করতে পারে , তাদের জন্য !
না , আর নয় । এবার আমায় আমার স্বপ্ন পূরণের দিকেই নজর দিতে হবে। দেখতে দেখতে অনেকটা বয়স আমার পেরিয়ে গেছে। আর মাত্র ২ বছর সময় আছে। তার মধ্যেই আমায় লক্ষ্য পূরণ করে দেখাতেই হবে।
আত্মোপলব্ধি করার পর থেকে তিনি মিলের কাজ বাদ দিয়ে নিজের পড়ার দিকে নজর দিলেন। প্রথম প্রথম সংসার ঠিকঠাক চললেও। কিছুদিনের মধ্যেই অনটন এর শুরু হলো। দিনরাত তার স্ত্রী খোটা দিতে শুরু করলো ” কেমন স্বামী , কেমন বাবা তুমি ? যে নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য স্ত্রী সন্তান কে না খাইয়ে মারে!
পরিবারের অবস্থা খারাপ দেখেও তিনি আর পিছু পা হলেন না , দিনে কয়েক ঘণ্টা মিল আর বাকি সময় পড়াশোনা , এভাবেই তার জীবন চলতে লাগলো । তবে তার স্ত্রী এসব ব্যাপার মোটেও পছন্দ করত না। বিভিন্ন সময় বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার হুমকি , আবার কখনও গলায় দড়ি দিয়ে মরার হুমকি এসব বলে রমেশ বাবু কে পড়াশোনা থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করতেই থাকতো। কিন্তু রমেশ বাবু এবার স্থির করেই নিয়েছেন , যাই হয়ে যাক না কেন , তিনি লক্ষ্য পূরণ করেই ছাড়বেন।
দেখতে দেখতে পরীক্ষার দিন এসে গেলো , তার পরীক্ষাও ভালো হলো। পরের পরীক্ষাও তার ভালোই হলো কিন্তু এর পর ঘটে গেলো এক দুর্যোগ তার জীবনে । তার স্ত্রী হঠাৎ করেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করলো। আর একটি চিঠিতে লিখে দিয়ে গেছে ,তার মৃত্যুর জন্য তার স্বামী দায়ী। তার স্বামী নাকি পর নারি তে আসক্ত ।
🌐পড়ুনঃ- ২০ সেকেন্ডে এই ধাঁধার উত্তর দিতে পাড়লে আপনি জিনিয়াস
রেজাল্টের দিন, অর্থাৎ যেদিন রমেশ বাবুর বিজয় উৎসব পালনের দিন, ঠিক সেইদিন তাকে পুলিশ উঠোন থেকে হিড়হিড় করে টানতে টানতে পুলিশ স্টেশন নিয়ে গেলো । মাঝে স্মৃতি হয়ে পড়ে রইলো তার সংসারের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম, আর লক্ষ্য পূরণের জন্য অবিশ্রান্ত অপমান ও স্ত্রীর অবহেলা। সবার ভালো করতে করতে , তিনিই খারাপের গভীর অন্ধকারে তলিয়ে পড়লেন।
আর তার স্বপ্ন পূরণ ! … সেটা হয়েও আর হলো না।
🌐পড়ুনঃ- একটি অসমাপ্ত প্রেমের গল্প
আমাদের সাথে যুক্ত হবেন যেভাবে- ফেসবুক- মুক্তাক্ষর টেলিগ্রাম- মুক্তাক্ষর WhatsApp Group- মুক্তাক্ষর